সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫৭ পূর্বাহ্ন
তবে সূত্র জানায়, বিকাল সাড়ে ৫টায় এমপি উদ্বোধন অনুষ্ঠানস্থলে যান। এ সময় গাড়ি থেকেই নেতাকর্মীদের বলেন, তোমরা তোমাদের কাজ কর। আমার ভাই অসুস্থ। আমি হাসপাতালে গেলাম। কিছুক্ষণ পরই এমপি সেখান থেকে চলে যান।
সূত্র জানায়, ডেমরার শুকুরশী এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদিতে বসানো অবৈধ এ ড্রেজারকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে ডিএসসিসির ৬৬ ও ৬৭ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় অভ্যন্তরীণ সড়ক দখল করে ফেলে রাখা হয়েছে অবৈধ ড্রেজার পাইপ। এমপির অনুমতি পেলেই ওয়ার্ডের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো কেটে বসানো হবে ড্রেজার পাইপ।
ওই পাইপগুলো রাস্তায় ফেলে রাখার কারণে স্বাভাবিক চলাচলে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন এলাকাবাসী। এদিকে অবৈধ এ ব্যবসার লভ্যাংশ ভাগাভাগি নিয়েও যুবলীগ নেতাকর্মীদের মাঝে যে কোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষসহ বড় ধরনের কোন্দলের আশংকা করছেন স্থানীয় রাজনীতিবিদসহ এলাকাবাসী।
সরেজমিন দেখা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৬৪ থেকে ৬৫ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার নিচু জমিগুলো বালু ভরাটের জন্য ডেমরার শুকুরশী এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতে বসানো হয়েছে অবৈধ ড্রেজার। আর এ ড্রেজারের জন্য ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডের শুকুরশীর অভ্যন্তরীণ সড়ক দিয়ে পূর্ব বক্সনগর ও বড়ভাঙ্গা-মহাকাশ রোড হয়ে ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের ডগাইর বোর্ড মিল পর্যন্ত ড্রেজার পাইপ রাস্তায় ফেলে রাখা হয়েছে। এতে অভ্যন্তরীণ ওই সড়কগুলোতে এলাকাবাসীর চলাচলে মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির ৬৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল মতিন সাউদ ও ৬৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ইবরাহীম বলেন, ড্রেজার পাইপ বসানোর বিষয়ে কোনো কাউন্সিলর বা সিটি করপোরেশন থেকে যুবলীগের কেউ অনুমোদন নেয়নি। তাছাড়া গত ১৯ ফেব্রুয়ারি পূর্ব বক্সনগর দারুন্নাজাত মাদ্রাসায় জুমার নামাজ পড়তে এসে ডিএসসিসি মেয়র ফজলে নূর তাপস ও এমপি (ঢাকা-৫) কাজী মনিরুল ইসলাম মনুর ড্রেজার পাইপ অপসারণের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া সত্ত্বেও তারা জোরপূর্বক ওয়ার্ড এলাকায় অভ্যন্তরীণ সড়কে পাইপ বসিয়েছে। এতে এলাকাবাসীসহ স্থানীয় নেতারা ক্ষোভে ফুঁসছেন। দ্রুত সড়ক থেকে এসব পাইপ অপসারণ না করা হলে যে কোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সম্ভাবনা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. মহিউদ্দিন রানা ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল করিম রেজার নেতৃত্বে ডেমরা থানা এলাকায় ডিএসসিসির ওয়ার্ড যুবলীগ নেতাকর্মীরা শীতলক্ষ্যায় ড্রেজার বসিয়েছে।
এদিকে এলাকাগুলো ঢাকা-৫ আসনের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এমপি কাজী মনিরুল ইসলাম মনুর নামেই নেতাকর্মীরা এ ড্রেজার ব্যবসা পরিচালনা করবেন বলে সূত্র জানিয়েছে। এ লক্ষে গত শুক্রবার (১২ মার্চ) ডেমরার অবৈধ এ ড্রেজার উদ্বোধনের অনুষ্ঠান আয়োজন করে যুবলীগ নেতাকর্মীরা। এতে স্থানীয় যুবলীগ নেতা জাফর, খলিলুর রহমান খলিল, মেহেদি ও আশপাশের ওয়ার্ড যুবলীগ নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
এলাকাবাসীর ও স্থানীয় রাজনীতিবিদদের অভিযোগ, এর আগে ডেমরা থানাধীন ৬৯ নম্বর ওয়ার্ডের মালা মার্কেট ও বাউলের বাজার, ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের অভ্যন্তরীণ মীরপাড়া, আমুলিয়া ও ধিৎপুরাসহ কয়েকটি এলাকায় এমপির নাম ভাঙিয়ে সড়ক দখল করে ড্রেজারসহ পাইপ বসানো হয়েছে। এসব বিষয়ে পুলিশ ও এলাকাবাসীর বাধাসহ নানা বিশৃঙ্খলাও সৃষ্টি হয়েছে। দলীয় কোন্দলসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে। একইভাবে এমপির নামে আবারও শুরু হয়েছে অবৈধ ড্রেজার বসানো। ইতোমধ্যে যুবলীগ সিন্ডিকেট এ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ শুরু করেছে বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ ও সহযোগী অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডেমরা থানার ওসি খন্দকার নাসির উদ্দিন বলেন, ড্রেজার পাইপ বসানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা থানাকে অবগত করেনি। তাছাড়া ড্রেজার পাইপ বসানোর অনুমোদন কোনোভাবেই দেওয়া হয় না। জরুরি ভিত্তিতে এসব ড্রেজার পাইপ অপসারণের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল করিম রেজা মোবাইল ফোনে বলেন, বিষয়টি এমপি মহোদয় জানেন। এলাকার উন্নয়নে ও ভরাটের ব্যাপারে এলাকাবাসীর দাবি অনুযায়ী, ড্রেজার বসানো হয়েছে জমি ভরাটের জন্য। তবে এ বিষয়ে আমাদের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। কারণ ওই এলাকার যুবলীগ নেতাকর্মীরা ড্রেজার বসিয়েছে। আর আমি ঢাকার বাইরে রয়েছি। উদ্বোধন অনুষ্ঠান কীভাবে করব?
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. মহিউদ্দিন রানা মোবাইল ফোনে বলেন, আমি এখন হাসপাতালে। এ বিষয়ে পরে কথা বলব।
ঢাকা-৫ আসনের এমপি কাজী মনিরুল ইসলাম মনু মোবাইল ফোনে বলেন, যুবলীগের পক্ষ থেকে ড্রেজার উদ্বোধনের জন্য আমাকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমি মহানগর যুবলীগ নেতারাসহ স্থানীয় যুবলীগ নেতাকর্মীদের বলেছি এ কাজ সম্পূর্ণ আইনবিরোধী ও অবৈধ। আমার পক্ষে ড্রেজার উদ্বোধন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাছাড়া এলাকায় ড্রেজার পাইপ বসিয়ে চলাচলের রাস্তাঘাটে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার অনুমোদন একজন এমপি কোনোভাবেই দিতে পারে না। তবে দলীয় হিসেবে নেতাকর্মীরা আমার কাছে অনেক কিছুই দাবি জানালেও অন্যায় কোনো কিছুর হুকুম আমি দিতে পারি না।
অবৈধ ড্রেজার উদ্বোধনের দিন বিকাল সাড়ে পাঁচটায় অনুষ্ঠানস্থলে যাওয়ার বিষয়ে শনিবার জানতে চাইলে এমপির ভাষ্য, ডিএসসিসি মেয়রের প্রোগ্রাম শেষে শুকুরশী এলাকায় একটি বিয়ের দাওয়াতে যান তিনি। অনুষ্ঠানস্থল দিয়ে যাওয়ার পথে তার গাড়ির গতিরোধ করেন ওই যুবলীগ নেতাকর্মীরা। তখন তিনি নেতাকর্মীদের বলেন, আমার সময় নেই। আমার ভাই হাসপাতালে। আমি এখন হাসপাতালে যাচ্ছি।